বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু চক্রের হাতে সিলেটের সাধারণ মানুষ জিম্মি। মিটারের রিডিং না দেখে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল প্রনয়ন চাঁদাবাজির ডিজিটাল পদ্ধতি।
বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে ফিল্ডে না এসে মিটারের রিডিং না দেখে অফিসের টেবিলে বসে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলছেন। বাসায় পুরুষ মানুষ না থাকলে মহিলাদের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করে বলে, আপনার মিটারের বকেয়া অনেক বিল রয়েছে। আপনি চাইলে এটা ঠিক করে দিব,তবে আমাদেরকে মোট টাকার অর্ধেক দিলে মিটার নষ্ট করে দিব। নতুন ডিজিটাল মিটারের জন্য ফিটিংসহ আলাদা ৩০০০ হাজার টাকা দিতে হবে।
অনেকেই টাকা বাঁচানোর আশায় এদের সাথে হাত মিলিয়ে আপাতত রেহাই পেলেও ৪/৫ মাস পরে দেখা যায় ৫ গুণ বকেয়াসহ নতুন বিল আসে। ফলে গ্রাহকদের বিশাল অংকের বিল পরিশোধ করতে হয়। ভৌতিক বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্নকরণ, জরিমানা কিংবা মামলা করে গ্রাহককে আটকের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা।
জুন মাসে যে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল এসেছিল দশ হাজার ৪৬২ টাকা, জুলাই মাসে তের হাজার ২৫৮ টাকা । পরের মাস আগস্টে সে গ্রাহকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৫ টাকার বিল! শুধু এই গ্রাহকই নন, জকিগঞ্জে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই হয়রানির মুখে পড়েছেন অধিকাংশ গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিল ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে গিয়ে ভজঘট বাধিয়ে বসেছে সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। তাদের অব্যবস্থাপনা আর মিটার রিডারদের দুর্নীতির কারণে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
গত জুলাই মাসে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে আসা বিদ্যুৎ বিল দেখে গ্রাহকদের চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। গত মাসে যাদের বিল এক হাজার টাকারও কম ছিল, তাদের বিল এ মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা এসেছে। স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকা, ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সমাবেশে এর প্রতিবাদ করলেও কোন সুরাহা মিলছে না। গ্রাহকদের আঙ্গুল দেখিয়ে চলছেন এসব বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।
শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী গোফরান আহমদ বিদ্যুতের ভৌতিক বিল নিয়ে পড়েন বিপাকে। তার বাড়ি সিলেটের লামাকাজী। তিনি কোন অভিযোগ কেন্দ্রে না গিয়ে সরাসরি আখালিয়া বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে চলে আসেন। সেখানে এসে দেখা হয় একজন কর্মকর্তার সাথে যিনি শাবিপ্রবির প্রাক্তন ছাত্র। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় রক্ষা পান গোফরান আহমদ।
পরে ঐ কর্মকর্তা সাস্টের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ ধরণের বিলের বিস্তর কাহিনী বর্ণনা করেন। যার সারগর্ভ হচ্ছে, টেকনিক্যাল ত্রুটি যতটা দায়ী , তারচে বেশি অসাধু মিটার রিডার ও কর্মকর্তারা। প্রথমে পরিক্ষামূলক ভাবে কিছু বাড়িয়ে বিল তৈরি করা হয় । কোন ধরণের অভিযোগ ছাড়া যদি গ্রাহক বিল পরিশোধ করেন তবে পরের মাসে তাদের জন্য আসে মহাপ্রলয়। যেমনটি ঘটেছে ফুলতলী এতিমখানার বিলে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীন জকিগঞ্জ অফিসের ডিজিএম সমস্যা দেখবেন বলে খোলা বিবৃতি দিলেও বাস্তবে ততটুকু দেখছেন না। তিনি বিল প্রদানকারীকে বলেন, মনে হয় বাড়তি খরচ করেছেন চলতি বিল পরিশোধ করেন, আগামীতে খেয়াল রাখা হবে। এ নিয়ে এতিমখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার প্রস্তাব আসলেও আলোচনায় বসেছেন না জকিগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা।
ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য হোক এ ধরণে অস্বাভাবিক বিলের ফাঁদ হতে মুক্তি চান জকিগঞ্জবাসী।